মা ও বাবার কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য সন্তানসন্ততি পেরেই থাকে। মাতাপিতার বৈশিষ্ট্য যে প্রক্রিয়ায় সন্তানসন্ততিতে সঞ্চারিত হয়, তাকে বংশগতি বলে। আর সন্তানরা পিতামাতার যেসব বৈশিষ্ট্য পায়, সেগুলোকে বলে বংশগত বৈশিষ্ট্য। বংশগতি সম্বন্ধে এক সময় মানুষের ধারণা ছিল কাল্পনিক। পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা দিয়েছেন কীভাবে পিতামাতার বৈশিষ্ট্য তার সন্তানসন্ততিতে সঞ্চারিত হয়। উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে প্রথম যিনি বংশগতির ধারা সম্বন্ধে সঠিক ধারণা দেন তার নাম গ্রেগর জোহান মেন্ডেল। বর্তমানে বহুলপতি সম্বন্ধে আধুনিক যে তত্ত্ব প্রচলিত আছে তা মেন্ডেলের আবিষ্কার তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ জন্য মেন্ডেলকে জিনতত্ত্বের জনক বলা হয়।
নিউক্লিয়াসে অবস্থিত নির্দিষ্ট সংখ্যক সুতার মতো যে অংশগুলো জীবের বংশগত বৈশিষ্ট্য বহন করে তাদের ক্রোমোজোম বলে। ক্রোমোজোমের গঠন ও কার সম্বন্ধে আমরা যে ধারণা পাই তা প্রধানত মাইটোসিস কোষ বিভাজনের প্রোফেজ ধাপে সৃষ্ট ক্রোমোজোম থেকে পাই। প্রতিটি ক্রোমোজোমের প্রধান দুটি অংশ থাকে ক্রোমাটিড ও সেন্ট্রোমিয়ার। মাইটোসিস কোষ বিভাজনের প্রোফেজ ধাপে প্রত্যেকটা ক্রোমোজোম লম্বালম্বিভাবে বিভক্ত হওয়ার পর যে দুটি সমান আকৃতির সুডার মতো অংশ গঠন করে তাদের প্রত্যেকটিকে ক্রোমাটিড বলে। ক্রোমাটিড দুটি যে নির্দিষ্ট স্থানে পরস্পর যুক্ত থাকে তাকে সেন্ট্রোমিয়ার বলে। কোষ বিভাজনের সময় পিন্ড ভ সেন্ট্রোমিয়ারের সাথে যুক্ত হয়।
নিউক্লিক এসিড দুই ধরনের যথা - DNA (ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক এসিড) এবং RNA ( ৱাইৰো নিউক্লিক এসিড)। কোমোজোমের প্রধান উপাদান DNA। বংশগতি ধারা পরিবহনে ক্রোমোজোমের বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী DNA ও RNA এর পুরুত্ব অপরিসীম। সাধারণত ক্রোমোজোমের DNA অণুগুলোই জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের প্রকৃত ধারক এবং জীবদেহের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরুষাণুক্রমে বহন করে। তাই বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী DNA এর অংশকে জিন নামে অভিহিত করা হয়। সুতরাং DNA হলো ক্রোমোজোমে অবস্থিত জিনের রাসায়নিক রূপ। যেসব জীবে DNA থাকে না কেবল RNA থাকে সে ক্ষেত্রে RNA জিন হিসেবে কাজ করে। যেমন- তামাক গাছের মোজাইক ভাইরাস (TMV)।
জীবের এক একটি বৈশিষ্ট্যের জন্য একাধিক জিন কাজ করে, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে একটিমাত্র জিন বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্যকে নিয়ন্ত্রণ করে। মানুষের চোখের রং, চুলের প্রকৃতি, চামড়ার রং ইত্যাদি সবই জিন কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। মানুষের মতো অন্যান্য প্রাণী ও উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যগুলোও তাদের ক্রোমোজোমে অবস্থিত জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। ক্রোমোজোম জিনকে এক বংশ থেকে পরবর্তী বংশে বহন করার জন্য বাহক হিসাবে কাজ করে বংশগতির ধারা অক্ষুণ্ণ রাখে।
মিয়োসিস কোষ বিভাজনের দ্বারা বংশগতির এ ধারা অব্যাহত থাকে। ক্রোমোজোম বংশগতির ধারা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য কোষ বিভাজনের সময় জিনকে সরাসরি মাতাপিতা থেকে বহন করে পরবর্তী বংশধরে নিয়ে যায়। এ কারণে ক্রোমোজোমকে বংশগতির ভৌতভিত্তি বলা হয়।
সুতরাং এ আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম মিয়োসিস কোষ বিভাজনের মাধ্যমে বংশগতির ধারা অব্যাহত থাকে এবং ক্রোমোজমের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বংশানুক্রমে প্রতিটি প্রজাতির স্বকীয়তা রক্ষিত হয়।
মানুষের প্রতিটি দেহকোষে ৪৬টি ক্রোমোজোম থাকে। জনন কোষে এবং ভ্রুণের কোষে ক্রোমোজোম সংখ্যা কত হবে? |
নতুন শব্দ : অ্যামাইটোসিস, মাইটোসিস, মিয়োসিস, হ্যাপ্লয়েড, ডিপ্লয়েড, স্পিন্ডল তন্তু, সাইটোকাইনেসিস, DNA, RNA, অপত্য কোষ, জাইগোট
এ অধ্যায় পাঠ শেষে যা শিখলাম
- জীবের বৃদ্ধি কোষ বিভাজনের মাধ্যমে ঘটে।
- কোষ বিভাজন কয় প্রকার এবং এগুলো কোথায় ঘটে?
- জীবে ক্রোমোজোম সংখ্যা কীভাবে ধ্রুবক থাকে?
- হ্যাপ্লয়েড ও ডিপ্লয়েড বলতে কী বোঝায়?
- বংশগতির ধারক জিন এবং বংশানুক্রমে এগুলোর বাহক ক্রোমোজোম।
- গ্রেগর জোহান মেন্ডেল বংশগতির জনক।